কাফফারার ও কাজা রোজার— নিয়ত করা আবশ্যক। RAMADAN
রোজা পালন করা ফরজ
বছরের বিভিন্ন সময়ে রোজা রাখলেও কেবল রমজান মাসের রোজা পালন করা ফরজ। রোজা কেবল উম্মতে মুহাম্মাদ জন্য ফরজ নয়, বরং তা অতীত নবী-রাসুলদের উম্মতদের জন্যও ছিল। কিন্তু রোজার সময়, পদ্ধতি ও ধারা ভিন্ন ছিল।
মুখে উচ্চারণের দরকার নেই
নিয়ত মানে ইচ্ছা ও সংকল্প। সংকল্প ছাড়া কেউ কয়েক দিনও খাবার না খান, তবে একে রোজা বলা যাবে না। রমজানের রোজার নিয়ত রাত থেকে করা যায়। বিশেষত ভোররাতে যখন সাহ্রি খাওয়া হয়, তখনই রোজার নিয়ত হয়ে যায়। তখন রোজা রাখার সংকল্প থাকলেই নিয়ত সম্পন্ন হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণের দরকার নেই। নিয়ত আরবিতে করাও জরুরি নয়।
রোজার বাংলা নিয়ত
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের রোজা রাখার নিয়ত করছি, যা আপনার সন্তুষ্টির জন্য ফরজ করা হয়েছে। অতএব, আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
অর্থ বিরত থাকা
রোজা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। কোরআন-হাদিসে এটিকে সিয়াম বলে। রোজা শব্দটিই প্রচলিত। সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে।
আয়াত: ১৮৩
কোরআন যে আয়াতটির মাধ্যমে রোজা ফরজ হয়, সেটিতেই ইঙ্গিত রয়েছে যে পূর্ববর্তী জাতি-গোষ্ঠীর জন্য রোজা ফরজ ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম (রোজা) বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
আইয়ামে বিজ
আদম (আ.)-এর সময় আইয়ামে বিজ বা প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতে হতো। ‘আইয়ামে বিজ’ অর্থ শুভ্রতার দিনসমূহ। আদম ও হাওয়া (আ.) জান্নাতে থাকাকালে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলায় তাঁদের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। তাই ফেরেশতারা তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাঁরাও তওবা করেন। ফলে তাঁদের গায়ের রং সাদা ও সুন্দর হয়। এরপর আল্লাহ আদম (আ.) ও তাঁর উম্মতকে প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) আইয়ামে বিজের সিয়াম পালন করতেন।’ (নাসায়ি)
রোজার নিয়ত না করা হয়
কোনো কারণে যদি রাতে রোজার নিয়ত না করা হয় বা দ্বিধা থাকে, তবে দিনের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ আছে। এরপর কিন্তু আর নিয়ত করার সুযোগ নেই। একইভাবে কেউ যদি সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখে রোজার মানত করে, তবে সেই নির্দিষ্ট দিনে অর্ধদিবস পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ আছে।
কাফফারার
অনির্দিষ্ট মানতের রোজা, কাফফারার রোজা, কাজা রোজা—এসবের জন্য কিন্তু রাত থেকেই নিয়ত করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে দিনে নিয়ত করার কোনো সুযোগ নেই।
সুস্থ ও মুকিম (যিনি নিজ শহরে অবস্থান করছেন, অর্থাৎ মুসাফির নন) ব্যক্তি যদি রোজার দিনে অন্য কোনো ওয়াজিব রোজার নিয়ত করেন। কোনো মুসাফির যদি রমজানের দিনে অন্য কোনো ওয়াজিব রোজার নিয়ত করেন, তাহলে সেই ওয়াজিব রোজাই তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে মুসাফির যদি রমজানের দিনে নফল রোজার নিয়ত করেন, তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সেটা রমজানের রোজাই সাব্যস্ত হবে।