ঈদ কবে কিবার? লাইলাতুল কদর চেনার আলামত। Eid
গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদের স্থানাঙ্ক বিবরণী প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাত ৯টা ১ মিনিটে
বিবরণীতে বলা হয়েছে, আগামী ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ মান সময় রাত ১২টা ২১ মিনিটে অমাবস্যা শেষ হয়ে ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদের জন্ম হবে, ওই দিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ০.৭৪৮০ দিন এবং সূর্যাস্তের ২২ মিনিট ৭ সেকেন্ড পরপর চন্দ্রাস্ত ঘটবে। ওই দিনই রাত ৯টা ১ মিনিটে প্রতিপদ (প্রথমা) শেষ হয়ে দ্বিতীয়া শুরু হবে।
৯ এপ্রিল চাঁদ দেখার নির্ধারিত সময় ৬টা ৩৮ মিনিট থেকে ৭টা ৫ মিনিট পর্যন্ত বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ১ দশমিক ৭৪৮৩ দিন এবং সান্ধ্যকালীন গোধূলি শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ৬ সেকেন্ড পর চন্দ্রাস্ত ঘটবে।
৯ এপ্রিল চাঁদ
এক আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ৯ এপ্রিল চাঁদের বয়স থাকবে এক দিনেরও কম। চাঁদ দিগন্তের সঙ্গে মাত্র ৯ ডিগ্রি কোণে উচ্চতায় থাকবে। আকাশে অবস্থানও করবে স্বল্প সময়ের জন্য। তাই খালি চোখে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। এদিকে ১০ এপ্রিল চাঁদ দেখার সম্ভাবনা বেশি এবং ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর হতে পারে।
ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ
ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নির্ধারণে আগামী ৯ এপ্রিল রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে সভায় বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, চান্দ্র মাস শুরু হাওয়ার ক্ষেত্রে খালি চোখে চাঁদ দেখার শর্ত রয়েছে।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি, ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে থাকা জেলা চাঁদ দেখা কমিটির কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পর চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে থাকে। জেলা চাঁদ দেখা কমিটিতে সদস্য সচিব থাকেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা।
আমরা জানি রোজা শেষে শাওয়ালের প্রথম দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। তবে কবে রোজা শেষ হবে তা নিশ্চিত হবে চাঁদ দেখার ওপর।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে কবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে সেই সিদ্ধান্ত দেবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে এর আগে চাঁদের স্থানাঙ্ক জানায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লাইলাতুল কদর
লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর কবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন হাদিসে এ রাতটি চেনার কিছু আলামতের কথা পাওয়া যায়।
রমজানের শেষ
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে। অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে তা তালাশ করো।
রাসুল (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন এবং মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করে বললেন, জিব্রাইল (আ.) এসে বলে গেলেন, লাইলাতুল কদর শেষের ১০ দিনে। আমার সঙ্গে যে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষের ১০ দিনে ইতিকাফ করে।
এ হাদিস দ্বারা আমরা নিশ্চিত বুঝতে পারি–রমজানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে শবে কদর।
মনিমান্বিত এ রাত চেনার আলামত
বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে কদরের রাত চেনার কিছু আলামতের কথা পাওয়া গেছে।
১. সে রাতে গভীর অন্ধকার থাকবে না।
২. মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হবে। সে রাত হবে নাতিশীতোষ্ণ।
৩. মানুষ সে রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে তৃপ্তি পাবে।
৪. এ রাতে কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক রাত সম্পর্কে জানাতে পারেন।
৫. এ রাতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি হতে পারে।
৬. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
শবে কদরের আলামত সম্পর্কে নবীজীর (সা.) বয়ান
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘...ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না। (মুসলিম : ১৬৭০)
গরম না ঠাণ্ডা
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনে খুযাইমা : ২১৯২)
হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ ১০ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাতে নিজের (আমলের) হিসাব নিতে দাঁড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর কদরের রাত্রি আছে বেজোড় রাত্রিগুলোতে : নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।
স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল
নবীজি আরও বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনা) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতে চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সে সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২২৭৬৫)
নবীজি (সা) আরও বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯)
এ রাতে করণীয় আমল
১. মহিমান্বিত এ রজনীর সব নেয়ামত হাসিলের জন্য প্রথমেই শিরকমুক্ত ঈমান পরিশুদ্ধ নিয়ত ও বিদায়াতমুক্ত আমলের মাধ্যমে রাত যাপন করতে হবে।
২. কদর লাভের আশায় শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করা।
৩. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
৪. কোরআন তেলাওয়াত করা। দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তাওবা-ইসতিগফার করা।