ঈদুল ফিতর এ দায়-দায়ীত্ব, যাকাত, ফিতরা, নিসাব। EID MUBAROK
ঈদুল ফিতর ও যাকাত ফিতরা
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার ও সামর্থ্য থাকলে ফিতরা (নির্দিষ্ট কিছু অর্থ যা গরীব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া) যাকাত (নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গরীব মানুষদের জন্য দিয়ে দেওয়া বিভিন্ন সম্পদের জন্য ভিন্ন হিসাবে যাকাত দিতে হয়) দেওয়ার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। এই দিনে সবাই সবাইকে “ঈদ মোবারক” বলে শুভেচ্ছা জানায়।
যাকাত ব্যয়ের নির্দিষ্ট আটটি খাত
কোরআন মজিদে যাকাত ব্যয়ের নির্দিষ্ট আটটি খাত উল্লেখ রয়েছে। সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত ব্যয়ের খাতও এগুলো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, মূলত সদকা হলো ফকির, মিসকিন, যাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলামের সুরক্ষার জন্য) ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথসন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৬০)
যাকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথা-বার্তা দ্বারা সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকীনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে। আর ঈদের নামাজের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মতো একটি দান হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯; ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম; ১/৪০)
সদকা মানে দান, আর ফিতর মানে রোজার সমাপন
যাকাতের মতো একটি আর্থিক ইবাদত হলো ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর। ‘সদকাতুল ফিতর’ দুটি আরবি শব্দ। সদকা মানে দান, আর ফিতর মানে রোজার সমাপন বা ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন আদায় করা সদকাকেই সদকাতুল ফিতর বলা হয়। ফিতরা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে না থাকলেও এটির গুরুত্বও অনেক। যাকাত অর্জিত সম্পদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য দেওয়া হয় আর ফিতরা রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রুটির কাফ্ফারা ও সাদাকাহ সাদাকাহ হিসেবে দেওয়া হয়।
ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত
এর বাইরে যাদের যাকাত, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত দেওয়া যায় না, তারা হলেন মা–বাবা ও ঊর্ধ্বতন পুরুষ যেমন দাদা-দাদি ও নানা-নানি। ছেলে-মেয়ে ও অধঃসন্তান পুরুষ যেমন নাতি-নাতনি। স্ত্রী, কারণ, তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান স্বামীর দায়িত্বে। সায়্যদ, অর্থাৎ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রকৃত বংশধর। ধনী লোক, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং অমুসলিম ব্যক্তি।
আগামী ১০ বা ১১ তারিখে হতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতর
চলছে রমজান মাস। আগামী ১০ বা ১১ তারিখে হতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনিবার, শবে কদর, পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে ঈদে বড় বন্ধ পেতে পারেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
পহেলা বৈশাখের ছুটি
সাধারণত আমাদের দেশে ২৯ রমজান থেকে শুরু হয় ঈদের ছুটি। সে অনুযায়ী আগামী ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে ঈদের ছুটি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ১২ ও ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র-শনি আর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে ফের অফিস শুরু হবে ১৫ এপ্রিল (সোমবার)। অর্থাৎ টানা ৬ দিনের ছুটি রয়েছে।
শবে কদর
তবে ৫ ও ৬ এপ্রিল যথাক্রমে শুক্র ও শনিবার। এরপর ৭ এপ্রিল (রোববার) শবে কদর। মাঝে কর্মদিবস একদিন ৮ এপ্রিল (সোমবার)।
চাঁদ দেখা
এদিকে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল হলেও এবার ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে আরব আমিরাত।
আরব আমিরাত
আরব আমিরাত জানিয়েছে, এবার রমজান মাস ৩০ দিনে হতে পারে। আর এমনটি হলে দেশটিতে ঈদুল ফিতর পালিত হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
নামাজের আগে প্রদান
রমজান ও ইদুল ফিতরের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হলো সদকাতুল ফিতর। সম্পদশালী মুসলমানদের পাশাপাশি দরিদ্র মুসলামানরাও যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। এই দানকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়।
সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা
ইদুল ফিতরের দিন সকালে যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য) মালিক থাকে, তার ওপর ওয়াজিব হয় তার নিজের পক্ষ থেকে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বাধীন-দাস ছোট-বড় নারী-পুরুষ সব মুসলমানের জন্য গম বা খেজুরের এক সা (৩ কেজি ২৭০ গ্রাম) সদকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৩)
শিশুর জন্ম হলে
ইদুল ফিতরের দিন সূর্যোদয়ের সময় সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। তাই ইদের দিন সূর্যোদয়ের আগে কোনো শিশুর জন্ম হলে তার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে, ইদের দিন সূর্যোদয়ের পর কোনো শিশুর জন্ম হলে তার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর দিতে হবে না।
নেসাব পরিমাণ
স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে তাদের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় না, তাদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়।
রোজা
ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের যাকাত বলা হয়।