বাংলাদেশের সহজ জয়। CRICKET GAME
দলের সেরা বোলার যদি চাপে পড়ে
মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটিতে রানের চেয়ে ইনটেন্টের বড় ভূমিকা দেখছেন মুশফিক। দিলশান মাদুশঙ্কাকে এক ওভারে মেরেছেন তিনটি চার, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মেরেছেন ছয়। এ ক্ষেত্রে ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে মুশফিক বলেন, ‘এটাকে অভিজ্ঞতা বলে। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের সেরা বোলার যদি চাপে পড়ে, তখন ওরা ভিন্ন চিন্তা করে। তখনই কিন্তু জুটিটা বেশি গড়ে ওঠে। অভিজ্ঞতা আসলেই বড় ব্যাপার। শান্ত শুরুটা কিছুটা স্ট্রাগল করছিল। এটা স্বাভাবিক। এই পুরো ম্যাচের প্রথম ক্রেডিট অবশ্যই রিয়াদ ভাই এবং শান্তর। সবার আগে রিয়াদ ভাইয়ের। ওই ইনটেন্টে ব্যাটিং করা...পরে আমার আর শান্তর জন্য রান করাটায় কোনো চাপই ছিল না।
দুর্দান্ত ব্যাটিং
হাত তুলে করলেন উদযাপন। দুর্দান্ত ব্যাটিং, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আর ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির পর এমন উদযাপন শোভা পায় তাকেই। শুরুতে বোলারদের নিয়মিত উইকেট এনে দেওয়া, পরে ব্যাটিং বিপর্যয় সামলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটিতে দলকে জয় এনে দেন শান্ত।
৬ উইকেটে হারিয়েছে
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২৫৫ রানে অলআউট হযে যায় সফরকারীরা। রান তাড়ায় নেমে শুরুতে কিছুটা চাপে পড়লেও পরে ৪৪ ওভার ৪ বলেই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
দারুণ শুরু পায় শ্রীলঙ্কা
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও আভিস্কা ফার্নান্দো খেলছিলেন হাত খুলে। যদিও পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ব্রেক থ্রু পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিব নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আভিস্কার উইকেট তুলে নেন।
৩৩ বলে ৩৩ রান করেন
অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলছিলেন তানজিম। ব্যাটারকে খেলতে হচ্ছিল শরীর থেকে দূরে থেকে। এমন এক বলে আভিস্কার ব্যাট ছুয়ে সহজ ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে ৩৩ রান করেন আভিস্কা। তাকে ফিরিয়েই থামেননি তানজিম সাকিব, নিজের পরের দুই ওভারে আরও দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার শুরুর স্বস্তি উড়িয়ে দেন।
এক ক্যাচ নেন মুশফিক
৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ বলে ৩৬ রান করে তানজিমকে পুল করতে যান নিশাঙ্কা। কিন্তু তার টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি। তৃতীয় স্লিপের কাছাকাছি দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ যায়। তানজিমের তৃতীয় ওভারে ৫ বলে ৩ রান করা সাদিরা সামারাবিক্রমার দারুণ এক ক্যাচ নেন মুশফিক। প্রথম স্পেলে ৫ ওভার করে কেবল ২২ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তানজিম।
শেষ করে আসতে পারেননি
১৩ রানের ভেতর তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তাদের রানের গতিও কমে যায়। ৩৭ বলে ১৮ রান করা চারিথ আশালাঙ্কাকে বোল্ড করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে কুশল মেন্ডিস হাল ধরেন জেনিথ লিয়ানগের সঙ্গে। তাদের ৬৮ বলে ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ।
তাসকিনের লেন্থ বল তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিস। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৭৫ বলে ৫৯ রান করেন তিনি। যদিও আরেক প্রান্তে ঠিকই টিকে থাকেন জানিথ। তিনি হাফ সেঞ্চুরি করলেও ইনিংসটা অবশ্য শেষ করে আসতে পারেননি। ৬৯ বলে ৬৭ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি।
অস্বস্তি নিয়েই
এর আগেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মাহেশ থিকসেনাকে ফিরিয়ে শেষদিকে শ্রীলঙ্কার বড় রান করে ফেলার শঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিলেন তাসকিন। বাংলাদেশ যদিও ইনিংসটা শেষ করেছে অস্বস্তি নিয়েই। ৮ ওভার ৪ বলে ৪৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তানজিম, তিন উইকেট পাওয়া তাসকিন ১০ ওভারে ৬০ রান দেন, শরিফুলও তিনটি উইকেট নিয়েছেন।
বোল্ড হয়ে সাজঘরে
রান তাড়ায় নেমে শুরুটা অবশ্য একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। মাদুশাঙ্কার করা ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান লিটন দাস। নিজের পরের ওভারে এসে সৌম্য সরকারকেও আউট করেন মাদুশাঙ্কা। স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দেওয়ার আগে ৯ বলে ৩ রান করেন তিনি।
৮ বলে ৩ রান করে প্রামোদ
তাওহীদ হৃদয়ও ফেরেন অল্পতে। ৮ বলে ৩ রান করে প্রামোদ মাদুসানের বলে বোল্ড হন তিনি। ২৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই হারের শঙ্কা ভর করে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু তিন নম্বরে খেলতে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন একদমই ঠাণ্ডা মেজাজে।
মাহমুদউল্লাহ ফিরলে
দুটি বড় জুটি গড়ে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান শান্ত। প্রথমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৬২ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন শান্ত। বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া ওই জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহ ফিরলে। ৩৭ বলে ৩৭ রান করে মাদুশাঙ্কার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে কুমারার বলে আউট হন রিয়াদ।
কিন্তু শান্ত খেলতে থাকেন দেখেশুনে। নতুন সঙ্গী মুশফিকুর রহিমও রান এগিয়ে যান দারুণভাবে, তিনি ছুয়ে ফেলেন হাফ সেঞ্চুরি। শান্ত? অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরিটির দেখা এদিন পেয়ে যান তিনি। বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরে-বাইরে মিলিয়ে তিন ফরম্যাটেই এর আগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
হারিয়েছিল ৩ উইকেট
৬২ বলে ৬৯ রানের জুটিতে ৩৭ বলে ৩৭ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। শ্রীলঙ্কা শুরুতে কয়েক উইকেট তুলে নেওয়ার পরও যে বাংলাদেশ রান রেটে পিছিয়ে পড়েনি, সেটিকে বড় করে দেখছেন মুশফিক, ‘যেকোনো দলই চাইবে শুরুতে ২–৩টা উইকেট তুলে নিতে। সেটা ওরা পেয়েছেও। রিয়াদ ভাই ও শান্ত তখন ব্রিলিয়ান্ট ব্যাটিং করেছে। রানরেটটা ঠিক ছিল। এরপর আমি এবং আরও যারা ছিলাম, তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে গেছে। আমাদের উচ্চাভিলাষী শট খেলার দরকার ছিল না।’
মুশফিক যখন ব্যাট করতে নামেন, বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ৯২। শুরুটা ছিল আরও বাজে। বাংলাদেশ ৫.১ ওভারে ২৩ রান তুলতেই হারিয়েছিল ৩ উইকেট। সেখান থেকে নাজমুল–মাহমুদউল্লাহর জুটি দলকে নিয়ে যায় এক শর কাছাকাছি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, নাজমুল–মাহমুদউল্লাহর চতুর্থ উইকেট জুটিই বাংলাদেশকে জয়ের পথে এগিয়ে দিয়েছে, ‘আমাদের জুটিটা অবশ্যই ভালো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আসল জুটিটা ছিল রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) আর শান্তর (নাজমুল)। ওই সময়টায় বল একটু নতুন ছিল। শিশিরও অত বেশি ছিল না।’
তবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এক বছরের জন্য অধিনায়ক করা হয় শান্তকে। ভীষণ চাপ, স্কোরবোর্ডে রান ঠিকঠাক রাখার লড়াই, উইকেটে টিকে থাকা ও জুটি গড়ার প্রয়োজন; সবকিছু ভালোভাবে সামলেই এই শতক পেলেন তিনি। সবমিলিয়ে ওয়ানডেতে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।
শান্তর সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের জুটি
শেষ অবধি তার সেঞ্চুরিটি জয়ের পথেই হয়েছে। শান্তর সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের জুটি দলকে ভিড়িয়ে দিয়েছে জয়ের বন্দরে। ১৭৫ বলে তাদের জুটি ছিল ১৬৫ রানের। ১২৯ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১২২ রান করে শান্ত ও ৮৪ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
বাংলাদেশ সময় , ১৩ মার্চ, ২০২৪